২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে যখন দেশের অর্থনীতি ধসে পড়ছে, তখন “দুর্নীতিমুক্ত সরকার” বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস। কাতারে গিয়ে বিদেশি দর্শকদের সামনে দাবি করেন, “এই সরকারে কোনো দুর্নীতি নেই, সবাই একমত।” কিন্তু দেশের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পত্রপত্রিকার পাতা ভর্তি দুর্নীতির খবরে স্পষ্ট যে ইউনুস সরকারের শুদ্ধতার স্লোগান নিছকই এক ভুয়া প্রচার।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা তিনশ কোটিরও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ শুধু একটি উদাহরণ। একইভাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিও’র বিরুদ্ধেও রয়েছে শত কোটির দুর্নীতির অভিযোগ। বিভিন্ন নাটকীয়তা ও ড্যামেজ কন্ট্রোলের পর তাঁরা পদত্যাগ করলেও—মূল দায় থেকে কেউই রেহাই পায়নি।
আসিফ মাহমুদের নিজস্ব অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ তাঁর পিতার ঠিকাদারি লাইসেন্স নেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে তিনি প্রথমে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান, পরে আবার নিজেই তাঁর এপিএসের বিরুদ্ধে তথাকথিত “স্বাধীন তদন্ত”-এর দাবি তোলেন। এই দ্বিচারিতা কি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের পরিচয় দেয়?
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে “দুর্নীতিমুক্ত” ঘোষণা দিয়ে দায়মুক্তি দিয়েছেন। অথচ এই সরকারের মেয়াদ মাত্র ৭ মাস—আর এই সময়েই বিভিন্ন উপদেষ্টার পিএ, এপিএস ও ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড় জমেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনএসপি)-এর একাধিক নেতার বিরুদ্ধে উঠেছে নিয়োগ বাণিজ্য, পাঠ্যবই ছাপায় কমিশন ও ডিসি নিয়োগে হস্তক্ষেপের অভিযোগ। যুগ্ম সদস্য সচিব সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাঁকে কেবল সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে দায় সারা হয়েছে। অথচ এই অপরাধের জন্য ফৌজদারি মামলা হওয়াটাই ছিল যৌক্তিক।
এ ছাড়া রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের” তিন নেতাকে—যাঁরা পরে টিকিট কালোবাজারি, বদলি বাণিজ্য এবং কর্মকর্তা ভয় দেখানোর মতো কাজের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন, এই তিনজন মন্ত্রণালয়জুড়ে এক ভয়ংকর দাপট চালিয়ে যাচ্ছেন।
ড. ইউনুসের আরেকটি গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত হলো—গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫% থেকে কমিয়ে ১০% এ আনা। এটি সরাসরি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সরকারি সম্পদের ব্যবহার এবং নৈতিক স্বার্থের সংঘাত (conflict of interest)-এর উদাহরণ। একইসাথে, তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি পাওয়া নিয়েও শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
দেশে একদিকে আন্দোলনের নামে চলছে সহিংসতা, অন্যদিকে উচ্চপর্যায়ের পদগুলো ভাগ করে নেয়া হচ্ছে ছাত্রনেতা, উপদেষ্টাদের আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক মিত্রদের মধ্যে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেন হয়ে উঠেছে ‘লুটেরার চক্রে’র ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আর আন্তর্জাতিক মহলে গিয়ে ইউনুস এই চিত্রের পুরোপুরি বিপরীত এক মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছেন।
এতসব কেলেঙ্কারির পরও যখন একজন সরকারপ্রধান “এই সরকার দুর্নীতিমুক্ত” বলে ঘোষণা দেন, তখন তা শুধু রাজনৈতিক অসততার পরিচয় নয়—বরং দেশের জনগণের সঙ্গে এক ধরনের বিদ্রূপ।
একটি দেশের অর্থনীতি যখন ঝুঁকির মধ্যে, তখন নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির সততা, দূরদর্শিতা এবং নৈতিক অবস্থান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। অথচ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক প্রতারণার প্রতীক হয়ে উঠছে।
প্রশ্ন উঠছে—এই অবৈধ ও মিথ্যাচারভিত্তিক শাসনব্যবস্থা আর কতদিন চলবে? জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে ইতিহাস সাক্ষী—তারা জবাব দিতে জানে।