বাংলাদেশ আজ এক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি। অন্তর্বর্তী সরকারে ক্ষমতায় আছেন একদল নৈতিকভাবে দেউলিয়া, রাজনৈতিকভাবে অনুপযুক্ত, ক্ষমতার মোহে অন্ধ এক দুর্বৃত্ত চক্র, যাদের মূল লক্ষ্য—ক্ষমতার সুযোগে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা। তাদের পরিচয়—“উপদেষ্টা”। কিন্তু জনগণের চোখে তারা আজ ব্যবস্থাপনার নামধারী লুটেরা।
নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, নূরজাহান বেগম—এই তিনজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক ছায়া-শাসনব্যবস্থা, যেখানে নিজেরা থেকে যাচ্ছেন নেপথ্যে, আর সামনে রেখে দিচ্ছেন এপিএস, পিএ, পিও-দের—যাদের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে শত কোটি টাকার দুর্নীতির সাম্রাজ্য।
এই চক্রের খেলাটা পরিষ্কার—‘সহযোগীদের দিয়ে কাজ করানো’, কিন্তু মূল সিদ্ধান্ত, অর্থ প্রবাহ এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়া আসে সরাসরি উপদেষ্টাদের কাছ থেকে। পিএ বা এপিএস শুধুই ছিল অজুহাত। প্রকৃত পরিচালক ছিলেন এই উপদেষ্টারা, যাঁরা নিজেরাই একেকটা মিনি-রাষ্ট্র চালাতেন প্রশাসনের ভেতরে।
তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম ছিলেন তথাকথিত তথ্য উপদেষ্টা, যাঁর ছায়ায় আতিক মোর্শেদ নামে একজন ব্যক্তি নগদ-এর ১৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ তিনি কোনো সরকারি কর্মকর্তা নন, কিন্তু নগদ ভবনে প্রতিদিন ‘রুটিন অফিস’ করেন। এমনকি তাঁর স্ত্রী পর্যন্ত ‘ম্যানেজার কমপ্লায়েন্স’ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে—কার ক্ষমতা, কোন নিয়োগ, কোন নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা এই বেনিয়মকে অনুমোদন দিচ্ছে?
জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টে নাহিদের সাম্রাজ্য এবং গোষ্ঠীগত নিয়োগের চিত্র স্পষ্ট:
🔗 https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/05/30/1525481
যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং তাঁর এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন মূলত গড়ে তুলেছেন এক তদবির-ভিত্তিক নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের শিল্প। মন্ত্রণালয়জুড়ে এই চক্র চালু করেছে কমিশন নির্ভর প্রক্রিয়া—যেখানে টেন্ডার, বদলি, ঠিকাদারি বিল সবকিছুই নির্ধারিত হয় ‘কত টাকা দিলে কি হবে’ সেই গাইডলাইনে।
মোয়াজ্জেমের অতীত ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’, অথচ আজ সে দেশের বৈষম্য তৈরিরই বড় সুবিধাভোগী। এর সবকিছুর ছাতা হিসেবে ছিলেন আসিফ মাহমুদ নিজেই।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিয়ন্ত্রণ করছেন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতের ‘বদলি বাজার’। তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ – তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসান – চিকিৎসক, নার্স, সিভিল সার্জন ও পরিচালক পর্যায়ে বদলি-পোস্টিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছেন। তুহিন এরইমধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, আর মাহমুদুল আজও ‘হজ টিম’-এর সদস্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে মেডিকেল পোস্টিংয়ে অর্থ আদায়ে সক্রিয়।
এই সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে, এত স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগে কেউ এত দিন বহাল তবিয়তে থাকতে পারতো না।
আসিফ ও নূরজাহানের দুর্নীতির খবরও জাতীয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে:
🔗 https://www.ittefaq.com.bd/728765/
নাহিদ, আসিফ ও নূরজাহান কারো নামেই আর সংশয় নেই—এরা আর শুধুমাত্র উপদেষ্টা নন, এরা এই অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতির প্রধান পরিচালক। যাঁরা পেছন থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন, অথচ মুখে বলছেন—স্বচ্ছতা, সংস্কার, উন্নয়ন।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন একটাই—এই চক্রকে দায়মুক্তি কে দিয়েছে? আদালত চুপ, প্রশাসন নীরব, মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত। ফলে রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে দুর্নীতিবাজদের প্লে-গ্রাউন্ড। এখানে নির্বাচন নেই, জবাবদিহি নেই, নীতির কোনো মূল্য নেই। এখানে সবকিছু চলে ‘কত দামে কি কেনা যাবে’ এই নিয়মে।
বাংলাদেশ আজ গভীর সংকটের মুখে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন—জবাবদিহি, তদন্ত ও বিচার। উপদেষ্টাদের নামধারী এই দুর্বৃত্ত চক্র যদি অব্যাহতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে, তাহলে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং প্রশাসন পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে পড়বে।
আর প্রশ্ন রয়ে যাবে—এদের থামাবে কে? জনগণ? নাকি ইতিহাস নিজেই?