বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ কালপর্ব অতিক্রম করছে—যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করতে কারাগার ও পুলিশ হেফাজতের মতো নিরাপদ স্থানকেও রক্তাক্ত করা হচ্ছে। ড. ইউনূস সরকারের শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২১ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কারাগারে অথবা পুলিশ হেফাজতে প্রাণ হারিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এক বিস্তৃত ও পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের অংশ।

৫ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে গ্রেফতার, নির্যাতন, চিকিৎসাবঞ্চনা এবং মৃত্যু—এই হচ্ছে ইউনূস প্রশাসনের ‘আওয়ামী লীগ মুক্তি’ প্রজেক্টের বাস্তব চেহারা।

নিরাপদ আশ্রয়স্থলে মৃত্যু: এটা কি রাষ্ট্র?

কারাগার ও পুলিশ হেফাজত—যেখানে আইনত একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকার কথা—সেখানেই মৃত্যু ঘটছে সুস্থ, নিরপরাধ, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় মানুষদের। গ্রেফতারের আগে যারা ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ, তাদের ওপর চালানো হয়েছে বর্বর নির্যাতন। অনেকের অসুস্থতার খবর পরিবার পর্যন্ত জানতে পারেনি। অনেকে চিকিৎসা পাননি, আবার অনেকে চিকিৎসার সুযোগ পেলেও তা এসেছে দেরিতে, প্রাণহানির পর।

মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ

সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী, গ্রেফতারকৃত প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা, খাদ্য, নিরাপত্তা এবং আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই ২১ জনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে, যা সরাসরি মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন। এই হত্যাকাণ্ডগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় ১৯৫০ সালের খাপড়া ওয়ার্ড গণহত্যা এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা—যেখানে রাষ্ট্রই হয়ে উঠেছিল হত্যার আয়োজক।

রাজনৈতিক নিধনযজ্ঞের নির্দেশ আসছে কোথা থেকে?

এই হত্যাগুলোর পেছনে আছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সরাসরি বা পরোক্ষ নির্দেশ। একটি কথিত ‘নিরপেক্ষ’ অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে যখন রাষ্ট্রের সব বাহিনী, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন কেন্দ্রীভূত হয়, তখন কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া কেবল সম্ভব নয়—বরং প্রমাণ করে যে এই হত্যার রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও নীরব অনুমোদন ছিল।

আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই:

আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। কারাগার একটি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার জায়গা নয়। যারা এই দায়িত্বে থেকেও হত্যাকাণ্ড ঘটতে দিয়েছে বা চোখ বন্ধ করে রেখেছে, তারা প্রত্যেকেই দায়ী।

আমরা এই হত্যাকাণ্ডগুলোর স্বাধীন, আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। এবং বিশ্বাস করি—আজ না হোক কাল, এই হত্যার বিচার হবেই, ইনশাল্লাহ।


কারাগারে নিহত ২১ নেতাকর্মীর সংক্ষিপ্ত তালিকা:

১. ইলাহি সিকদার – গোপালগঞ্জ, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
২. শফিকুল ইসলাম – গাইবান্ধা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৩. সোহরাব হোসেন আপেল – গাইবান্ধা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪. আলীমুজ্জামান চৌধুরী – গোপালগঞ্জ, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
৫. শহিদুল ইসলাম রতন – বগুড়া, ১১ নভেম্বর ২০২৪
৬. আবদুল লতিফ – শিবগঞ্জ, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
৭. অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনু – বগুড়া, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
৮. হযরত আলী – ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
৯. আবদুল মতিন মিঠু – গাবতলী, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
১০. আতাউর রহমান আঙ্গুর – সিরাজগঞ্জ, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
১১. নিত্য সরকার – মানিকগঞ্জ, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
১২. শেখ জহিরুল ইসলাম – গাজীপুর, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
১৩. মমিনুর ইসলাম – নীলফামারী, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
১৪. আক্তার শিকদার – খুলনা, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
১৫. আব্দুর রাজ্জাক – সাভার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
১৬. সিদ্দিক হোসেন মোল্লা – নওগাঁ, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
১৭. জাহিদুল ইসলাম শিপু – টাঙ্গাইল, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
১৮. এমদাদুল হক ভুট্টো – বগুড়া, ১১ মার্চ ২০২৫
১৯. সুজিত চন্দ্র দে – কিশোরগঞ্জ, ২ এপ্রিল ২০২৫
২০. রিয়াজুল ইসলাম (রাইজুল) – সুনামগঞ্জ, ৯ এপ্রিল ২০২৫
২১. ফরজাদ হোসেন সজিব – চট্টগ্রাম, ২৫ এপ্রিল ২০২৫


মোহাম্মদ আলী আরাফাত
সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ
সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী