বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আজ এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। যেখানে সংবাদমাধ্যম শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার নয়, বরং উগ্রবাদী মৌলবাদী গোষ্ঠী, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং মালিকানাধীন অর্থনৈতিক নিপীড়নের মাঝখানে পড়ে এক ভয়াবহ অস্তিত্ব সংকটে নিমজ্জিত।
এক সময় সংবাদমাধ্যম ছিল জাতির বিবেক—আজ সেই গণমাধ্যমকেই ধীরে ধীরে নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ এবং নিঃস্ব করে ফেলা হচ্ছে।
বর্তমানে সরকারের সমালোচনা করা মানেই সাংবাদিকদের জন্য নতুন শঙ্কা—মিথ্যা মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ, অথবা সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি। সাংবাদিকেরা এখন রাষ্ট্রের দমননীতি ও মৌলবাদী সহিংসতার মধ্যে পড়ে দুই দিক থেকে চেপে বসা আগুনে পুড়ছেন।
৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর শুরু হয়েছে এক প্রকার ‘মিডিয়া শুদ্ধি অভিযান’, যার আওতায় টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়া থেকে অন্তত ২০০০ জন সাংবাদিক ছাঁটাই হয়েছেন। এদের অপরাধ?—তারা নিরপেক্ষ ছিলেন, অনুসন্ধান করতেন, সরকারের অনুগত হয়ে ওঠেননি।
বেকার হয়ে পড়া সাংবাদিকদের জীবন এখন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত। আর যারা এখনও চাকরিতে টিকে আছেন, তাঁদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। অনেক পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল মাসের পর মাস বেতন দিচ্ছে না। কোনো কোনো জায়গায় সাংবাদিকদের ১০–১৫ হাজার টাকায় পূর্ণ সময় খাটিয়ে নিচ্ছে, যা সরাসরি শ্রমিক শোষণ।
অন্যদিকে, মালিকপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতাও যুক্ত হয়েছে এই সংকটে। অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক চাপের মুখে নিজেদের নীতিতে আপস করে ফেলেছে—ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতা সেখানে একরকম নিষিদ্ধ।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম আজ রাজনৈতিক দমন, মৌলবাদী সন্ত্রাস এবং আর্থিক শোষণ—এই তিন দিক থেকে বিপর্যস্ত। যারা সত্য প্রকাশ করতেন, এখন তারা হয় জেলখানায়, অথবা চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব।
সাংবাদিকেরা যদি কথা না বলেন, যদি সত্য চাপা পড়ে যায়, তাহলে জনগণ অন্ধ থাকবে—আর গণতন্ত্র নিঃশব্দে হারিয়ে যাবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু একটি পেশার অধিকার নয়, এটি একটি জাতির বিবেক, নাগরিকদের চোখ এবং গণতন্ত্রের শ্বাসপ্রশ্বাস। যদি সেটিকে নিঃশেষ করা হয়, তাহলে ধ্বংস হবে বিচার, প্রশ্ন, এবং প্রতিবাদ—সবকিছু।
এখন সময় এসেছে—
বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন চুপ, কারণ তাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে ভয়, বেকারত্ব, মামলা, ও হামলার মাধ্যমে। কিন্তু চুপ থাকলেই মুক্তি নেই।
এই চুপচাপ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এখন প্রয়োজন সাহসী, সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ। এখনই।